
নোয়াখালীর সাউথবাংলা হাসপাতালে চিকিৎসকদের অবহেলায় মা ও নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় ৫০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রিট দায়ের করা হয়েছে।
বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় সেনবাগ প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক এম এ আউয়ালের পক্ষে রিটটি দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. সোলায়মান (তুষার)।
রিটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিলের রেজিস্টার, বাংলাদেশ নার্সিং মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের রেজিস্টার, নোয়াখালী জেলার সিভিল সার্জন, নোয়াখালীর সাউথবাংলা হাসপাতাল, হাসপাতালের পরিচালক মহিউদ্দিন, নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জুনিয়র কনসালটেন্ট (অ্যানেস্থেসিয়া) চিকিৎসক মো. আক্তার হোসেন অভি, তার স্ত্রী ও নোয়াখালী মেডিকেল অ্যাসিসট্যান্ট ট্রেনিং স্কুলের (ম্যাটস) জুনিয়র লেকচারার ফৌজিয়া ফরিদ, সাউথবাংলা হাসপাতালের মেডিকেল সহকারী জাহিদ হোসেন ও ওটি ইনচার্জ সজিব উদ্দিন হৃদয়কে বিবাদী করা হয়েছে।
এর আগে গত ২৯ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. সোলায়মান (তুষার) ডাকযোগে সংশ্লিষ্টদের প্রতি লিগ্যাল নোটিশ পাঠান। ওই নোটিশের পরে কোনোরকম পদক্ষেপ না নেওয়ায় রিট আবেদন করা হয়েছে।
নোটিশে বলা হয়, ২০২৩ সালের ১৬ অক্টোবর রাতে সেনবাগ প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক এমএ আউয়াল তার অন্তঃসত্ত্বা মেয়ে উম্মে সালমা নিশির (২৭) চিকিৎসার জন্য সাউথবাংলা হাসপাতালে যান। এসময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, কর্মরত মেডিকেল সহকারী জাহিদ হোসেনের সহায়তায় ডা. আক্তার হোসেন অভি ও তার স্ত্রী ডা. ফৌজিয়া ফরিদ রোগীকে হাসপাতালে আনুষ্ঠানিকভাবে ভর্তি না করে, রোগীর কোনোরকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করে এবং অভিভাবকের সম্মতি না নিয়েই সিজার করেন।
এসময় ঘটনাস্থলেই মা ও সন্তানের মৃত্যু হয়। ঘটনা ধামাচাপা দিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসক ডা. অভি তার স্ত্রী ফৌজিয়া ফরিদ প্রসূতির অবস্থা সংকটাপন্ন জানিয়ে আইসিইউ সাপোর্টের কথা বলে কুমিল্লায় পাঠায়। ভিকটিমের অভিভাবকরা তাকে কুমিল্লার টাওয়ার হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান অনেক আগেই রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
নোটিশে উম্মে সালমা নিশি ও তার নবজাতক মৃত্যুর ঘটনায় পাঁচদিনের মধ্যে ভিকটিমের পরিবারকে ৫০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ ও ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। বিবাদীরা যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ায় হাইকোর্ট বিভাগে রিট দায়ের করা হয়।
নোটিশে বলা হয়, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসকদের ভুলে ভিকটিম এবং নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। যা সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৮ ও ৩২ এর লঙ্ঘন। তারা এর দায় কোনোমতেই এড়াতে পারেন না। রোগীকে অন্য হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি।
এবিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. সােলায়মান (তুষার) বলেন, নোয়াখালীর সাউথবাংলা হাসপাতালে আমার মক্কেলের মেয়ের সঙ্গে যা ঘটেছে তা খুবই হৃদয়বিদারক। একজন গর্ভবতী নারীকে কোনোরকম পরীক্ষা না করেই সিজার করা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসকদের এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ মৃত্যুর দায় এড়াতে পারে না।
তিনি আরও বলেন, নোটিশ দেওয়ার পর বিবাদীরা যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ায় রিট দায়ের করা হয়েছে। রিটটি শুনানির জন্য অতিদ্রুত সংশ্লিষ্ট কোর্টে উত্থাপন করা হবে।