
ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের আত্মসাৎকৃত টাকা উদ্ধারে সাবেক চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম ও পরিচালক এম এ খালেকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) আবেদন করেছে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি।
রোববার (২ ফেব্রুয়ারী) আবেদনের বিষয়টি নিশ্চিত করেন ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানীর চেয়ারম্যান মো. ফখরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, গত ২৬ জানুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান বরাবরে করা ফারইস্টের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. শহীদুল ইসলাম সই করা চিঠি গ্রহণ করেছে সংস্থাটি।
এতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণসহ তাদের সম্পত্তি ক্রোক করার আবেদন করা হয়েছে।
দুদক চেয়ারম্যান বরাবর দেয়া ফারইস্টের আবেদন সূত্রে জানা গেছে, ফারইস্ট ইসলামি লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড ২০০০ সালের ২৯ মে প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০৫ সালে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এ কোম্পানির অনুমোদন দেয়। বর্তমানে কোম্পানির প্রায় ২৭ লাখ গ্রাহক রয়েছে।
কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার অভিযোগ, কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম ও পরিচালক এম এ খালেক কোম্পানির তৎকালীন সিইও মো. হেমায়েত উল্ল্যাহ, ব্যাংকিং ইনচার্জ শেখ আব্দুর রাজ্জাক, কোম্পানি সেক্রেটারি এম এ আজিজ, অডিট হেড কামাল হোসেন হাওলাদার, আইটি হেড মাজেদুল ইসলাম, অর্থ ও হিসাব ইনচার্জ কামরুল হাসান খান, ও নজরুল ইসলামের পিএস আজহারুল ইসলামের যোগসাজশে মহাদুর্নীতি করা হয়েছে।
তারা ২০১০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংকে কোম্পানির বিনিয়োগকৃত এমটিডিআর ভুয়া Extract এর মাধ্যমে এফডিআরের বিপরীতে ঋণ (লিয়েন) করে অর্থ জালিয়াতি, ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে নগদ উত্তোলন, ভুয়া ব্যাংক হিসাব খুলে অর্থ স্থানান্তর ও জমি ক্রয়ে অনিয়ম করে এক হাজার ৮০৬ কোটি ৭৯ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। একই সঙ্গে তাদের নিজস্ব ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ৫৬৩ কোটি ৯২ লাখ টাকা ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ করেছেন।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের নিয়োগকৃত স্বতন্ত্র বোর্ড এবং বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নিয়োগকৃত হুদাভাসী অ্যান্ড কোং ও সিরাজ খান বসাক অ্যান্ড কোম্পানির তদন্তে অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি উঠে এসেছে।
তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী জানা যায়, আত্মসাৎকৃত টাকা উদ্ধারের জন্য ফারইস্ট কর্তৃপক্ষ এম এ খালেক ও নজরুল ইসলাম গং এর বিরুদ্ধে ২০২২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর একটি ২০২৩ সালের ৩ মে দুটি ও ৩০ মে একটিসহ চারটি মামলা দায়ের করে। একই বছর ৯ মে দুদকের পক্ষ থেকেও তাদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়। এছাড়া ২০২৪ সালের ৫ ডিসেম্বর তাদের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে দুদকে আরও তিনটি অভিযোগ দাখিল করা হয়।
ফারইস্টের ওই আবেদনে জানানো হয় যে, কোম্পানির প্রায় ৫ লাখ গ্রাহকের ২০২১ সাল থেকে বীমা দাবি বকেয়া রয়েছে। কোম্পানির অর্থ সংকটের কারণে এসব বীমা দাবি পরিশোধ করা যাচ্ছে না বলে আবেদনে উল্লেখ করা হয়।
মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ওই আবেদনে উল্লেখ করেন যে, সময়মতো বীমা দাবি পরিশোধ করতে না পারায় পাওনাদার গ্রাহকগণ কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মারধর করে গুরুতর জখম করে অফিস ভাঙচুর করাসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদেরকে বিভিন্নভাবে লাঞ্ছিত করছে। আবার অনেকে কোম্পানির হেড অফিসে এসে প্রধান কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অশালীন ভাষায় আক্রমণ করাসহ অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করছে।
আবেদনে ওই কর্মকর্তা আরও উল্লেখ করেন, ইতোমধ্যে পাওনাদার গ্রাহকদের আক্রমণের শিকার হয়ে কোম্পানি অনেক শাখা অফিস বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে।
এদিকে বীমা সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতে, দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিদের দুর্নীতির মাধ্যমে উপার্জিত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ ক্রোক তথা Attachment করার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়েছে বা নিচ্ছে। একইভাবে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির অর্থ আত্মসাৎকারীদের বিরুদ্ধেও একই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে আত্মসাৎকৃত টাকা উদ্ধার করা সম্ভব।
আবেদন সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্তদের নামে দেশবিদেশে অগণিত স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে। মামলা-মোকদ্দমা ও কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বিভিন্ন আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করায় তারা তাদের বাংলাদেশের স্থাবর সম্পত্তিগুলো অন্যত্র বিক্রি করে টাকা পাচার করতে পারে বলে ধারণা করছে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ।
এ ধারণা থেকে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি কর্তৃপক্ষ, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত আইনগত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণসহ তাদের সম্পত্তি ক্রোক করে আত্মসাৎকৃত টাকা উদ্ধারের আবেদন করা করেছে। এতে কোম্পানি তার পাওনাদার গ্রাহকদের টাকা পরিশোধ করতে পারবে।