
প্রতিনিধি, কুড়িগ্রাম
কুড়িগ্রামের সীমান্তে আলোচিত ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে ফেলানী হত্যার ১৪ বছর পেরিয়ে গেলেও বিচার না পাওয়ায় হতাশ তার পরিবার। ১৪ বছর পর বর্তমানের অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সুষ্ঠু বিচারের আশা করেছিলেন তারা। এই সরকারে যেকোনো উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করতে ঢাকায় গিয়েছিলেন ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম নুরু, মা জাহানারা বেগম ও ভাই জাহান উদ্দিন।
পরে মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) রাতে বর্তমান সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার বাসভবনে তার সঙ্গে দেখা করেন ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম, মা জাহানারা বেগম ও ছোট ভাই জাহান উদ্দিন।
এ সময় ফেলানী হত্যার বিচারে সরকারের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। একই সঙ্গে ফেলানীর ভাইদের চাকরি দেওয়াসহ পরিবারের ভরণ পোষণের দায়িত্ব নেওয়ারও আশ্বাস দিয়েছেন উপদেষ্টা। এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
নিহত ফেলানী খাতুনের ছোট ভাই জাহান উদ্দিন বলেন, ‘মঙ্গলবার রাতে আমরা উপদেষ্টা আসিফ ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করেছি। তিনি আমাদের ভাইয়ের পড়াশোনা শেষ করে চাকরি দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা অনেকটা চিন্তামুক্ত হয়েছি। তিনি আমার বোনের হত্যার সঠিক বিচার পাওয়ার বিষয়েও আশ্বাস দিয়েছেন।’
ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম নুরু বলেন, ‘মেয়ের হত্যার বিচার ১৪ বছরেও পাইনি। আমার বিশ্বাস ছিল এ সরকার বিচারের জন্য চেষ্টা করবেন। তিনি সঠিক বিচার পাওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন, আমরা খুশি হয়েছি। উপদেষ্টা আমার পরিবারের দায়িত্ব নিয়েছেন।’
প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ভোরে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তে বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষের গুলিতে নিহত হয় ফেলানী। কাঁটাতারে চার ঘণ্টা ঝুলে থাকে ফেলানীর লাশ। বিশ্বজুড়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হলে ঘটনার আড়াই বছর পর ভারতের কোচবিহারে বিএসএফের বিশেষ কোর্টে শুরু হয় ফেলানী হত্যার বিচার। কোর্টে গুলি করার কথা স্বীকার করে বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষ। কিন্তু ২০১৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বর অমিয় ঘোষকে খালাস দেয় বিশেষ কোর্ট। প্রহসনের বিচার উল্লেখ করে রায় প্রত্যাখ্যান করে পুনঃবিচারের দাবি তোলেন ফেলানীর বাবা।
২০১৫ সালের ২ জুলাই আবারও খালাস পায় অমিয় ঘোষ। সে রায়ও প্রত্যাখ্যান করেন তিনি। ভারতের মানবাধিকার সংগঠন মাসুম-এর সহায়তায় দেশটির সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টে পুনঃবিচার চেয়ে রিট করেন ফেলানীর বাবা। সে বছর ১৩ জুলাই ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ফেলানীয় বাবার রিটটি গ্রহণ করলেও গেল সাড়ে ৮ বছরে বারবার শুনানির তালিকায় থাকলেও শুনানি হয়নি একবারও। ফেলানী নিহতের পরও প্রায় ৩০ জনের প্রাণ গেছে জেলার বিভিন্ন সীমান্তে।