​৪০ বছর ঘুরে মামলায় জিতলেন হরেন্দ্রনাথ, পাবেন ২০ লাখ টাকা

আপলোড সময় : ১০-১২-২০২৪ ০৮:১৬:১৪ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ১০-১২-২০২৪ ০৮:১৬:১৪ অপরাহ্ন

নতুন দেশ ডেস্ক :

আদালতের বারান্দায় ৪০ বছর ঘুরে আইনি লড়াইয়ে জয়ী হয়েছেন কুষ্টিয়ার খোকসার হেলালপুর গ্রামের বাসিন্দা বৃদ্ধ হরেন্দ্রনাথ চন্দ্র। অবশেষে সোমবার আদালতে প্রমাণ হয়েছে তার বিরুদ্ধে করা সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষের করা মামলাটি ভুয়া ছিল। এ কারণে হরেন্দ্রনাথকে মামলা পরিচালনার খরচ হিসেবে আগামী তিন মাসের মধ্যে ২০ লাখ টাকা দেওয়ার নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ। আপিল বিভাগের সিনিয়র বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন বিচারপতির বেঞ্চ এ রায় দেন।

আইনি লড়াইয়ে জয়ী হওয়ার প্রতিক্রিয়ায় হরেন্দ্রনাথ চন্দ্র খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমি কোনো অন্যায় করিনি। বিশ্বাস ছিল আমি জিতব। আদালতের এই রায়ে মোটামুটি খুশি। ৪০ বছর আইনি লড়াই করে সর্বস্বান্ত হয়েছি। মামলা চালাতে ১০-১২ বিঘা ফসলি জমি বিক্রি করতে হয়েছে। ভিটেমাটি, ঘরও আমার নেই। এখন আমি ভূমিহীন। আমার দুই মেয়ে। ঢাকার গাবতলীতে বড় মেয়ের বাসায় থাকতে হচ্ছে। মামলা চালানোর সামর্থ্যও আমার ছিল না। দুই বছর আগে ভূমিহীন হিসেবে আবেদন করে সরকারি উকিল নিয়ে মামলা চালিয়েছি।’ 

হরেন্দ্রনাথ আরও জানান, সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তার আরও একটি মামলা রয়েছে। ২০১২ সালে করা সেই মামলায় ব্যাংকে চাকরির শুরু থেকে অবসর সময় (১৯৭৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে ২০১০ সালের ৯ জানুয়ারি) পর্যন্ত পাওনা ১ কোটি ৭৪ লাখ টাকা চেয়েছেন। হাইকোর্টে দায়ের করা সেই রিটের শুনানি আগামী বছরের জানুয়ারিতে হতে পারে বলেও জানান তিনি। 

আদালতে সোনালী ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আবদুস সোবহান। আর হরেন্দ্রনাথের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার ওমর ফারুক। তিনি বিনামূল্যে সরকারি আইনি সেবায় নিযুক্ত হয়ে হরেন্দ্রনাথের পক্ষে মামলায় লড়েছেন। মামলার বিষয়ে ব্যারিস্টার ওমর ফারুক জানান, ‘এই বৃদ্ধ ব্যক্তি আজ ভারমুক্ত হলেন। ১৯৮৫ সালের একটি ঘটনায় তিনি জেলও খেটেছেন। এরপর সব আদালতেই তিনি জয়ী হয়েছেন। তবে প্রতিটি ধাপেই ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আপিল করেছে। আপিল বিভাগে সর্বশেষ আপিলেও জয়ী হয়েছেন হরেন্দ্রনাথ। আরজিতে আদালত হরেন্দ্রনাথকে ২০ লাখ টাকা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে তিন মাসের মধ্যে এই আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। 

মামলার তথ্য অনুযায়ী, ৪০ বছর আগে ব্যাংকের ১৬ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে হরেন্দ্রসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে। তবে সেই মামলায় খালাস পেলেও সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আপিল করে মামলাটি জিইয়ে রাখে। এভাবে চার দশক কেটে গেলেও আদালতে মামলাটির নিষ্পত্তি হয়নি। বিএ পাস করার পর ১৯৭৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর ক্যাশিয়ার-কাম ক্লার্ক পদে সোনালী ব্যাংকে ঢাকার একটি শাখায় কাজ শুরু করেন হরেন্দ্রনাথ। চাকরিকালে রেমিট্যান্সসংক্রান্ত ১৬ লাখ ১৬ হাজার ১০০ টাকা যাত্রাবাড়ী শাখা থেকে লোকাল অফিসে স্থানান্তর করা হয়। ১৯৮৫ সালের ২৯ জুলাই ব্যাংকের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে হরেন্দ্রনাথসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার বিশেষ আদালতে ফৌজদারি মামলা করে তৎকালীন দুর্নীতি দমন ব্যুরো। বিচারে ১৯৮৬ সালের ১৫ নভেম্বর বেকসুর খালাস পান হরেন্দ্রনাথসহ সবাই। একই বছর অপর এক মামলায় ওই কর্মকর্তাকে সাত বছর কারাদণ্ড দেন আদালত। 
আদালতের নির্দেশে সাজার পর অভিযুক্ত হরেন্দ্রসহ সবাইকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। ১৯৯০ সালে হরেন্দ্রনাথ জেল খেটে বের হন। 

মামলায় পরাজিত হয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ হরেন্দ্রসহ সবার বিরুদ্ধে অর্থঋণ আদালতে মামলা করে। সেই মামলায় একতরফা রায়ে তাদের দোষী সাব্যস্ত করে সমুদয় অর্থ ফেরত দেওয়ার আদেশ দেন আদালত। এর বিরুদ্ধে আবেদন (মিস কেস) করেন হরেন্দ্রনাথ। ১৯৯২ সালের ১৯ আগস্ট ঢাকার যুগ্ম জেলা জজ আদালত আপিল গ্রহণ করেন। একই সঙ্গে বিচারিক আদালতের আদেশ বাতিল করেন। এরপর ওই রায়ের বিরুদ্ধে সোনালী ব্যাংক ২০১৯ সালে হাইকোর্টে আপিল করে। ২০২২ সালের ২৯ আগস্ট এ আপিল খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। গত বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

সম্পাদকীয় :

সম্পাদক: নূরুল কবির
ঠিকানা: ৯৯/১ সোহরাওয়ার্দী এভিনিউ, বারিধারা ডিপ্লোমেটিক জোন, ঢাকা ১২১২।
ইমেইল: [email protected]


অফিস :