নোয়াখালী জেলা আধুনিক তথ্য কমপ্লেক্স ভবনের কাজ পাওয়া থেকে শুরু করে নির্মাণে অনিয়ম তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে গণপূর্ত অধিদপ্তর।
বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) দুপুরে গণপূর্তের নোয়াখালী জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ কামরুল হাছান কমিটি গঠনের বিষয়টি নতুনদেশকে নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, চিঠিতে তিন কর্মদিবসের মধ্যে দরপত্রের সব তথ্য প্রদানের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক গণপূর্ত অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (প্রকিউরমেন্ট) আশেক আহমেদ শিবলী, সদস্যসচিব গণপূর্ত প্রকল্প বিভাগ-৫ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আ ন ম মাজহারুল ইসলাম এবং সদস্য গণপূর্ত ডিজাইন বিভাগ-৪ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হেজবুল কবির।
চিঠিতে বলা হয়, পত্রিকায় ‘নোয়াখালী তথ্য কমপ্লেক্স: জাল সনদে ১৫ কোটি টাকার কাজ বাগিয়ে নির্মাণে অনিয়ম’ শীর্ষক শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনের অভিযোগের বিষয়ে সরেজমিন তদন্তের জন্য তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
‘এমতাবস্থায় উক্ত কাজের দরপত্র প্রক্রিয়াকরণ সংক্রান্ত কাগজপত্রাদি (আইএফটি, দরপত্র দালিল, মূল্যায়ন প্রতিবেদন, চুক্তি সম্পাদককারী দরপত্র দাতার দাখিলকৃত সকল ডকুমেন্ট), সম্পাদিত চুক্তি, কাজের বর্তমান অবস্থা এবং এ বিষয়ে তার মতামতসহ প্রয়োজনীয় তথ্যসমূহ তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রেরণের জন্য অনুরোধ করা হলো।’
এর আগে নতুনদেশের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, স্থানীয় গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে জাল সনদে ২০২৩ সালে প্রায় ১৫ কোটি টাকার এ কাজ বাগিয়ে নেয় আওয়ামী লীগের একটি সিন্ডিকেট। এখন তারাই প্রভাবশালীদের হাত করে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে যেনতেনভাবে দায়সারা কাজ করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আরও পড়ুন: নোয়াখালীতে গণপূর্তের ১৫ কোটি টাকার কাজে ব্যাপক অনিয়ম
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার আধুনিক এ কমপ্লেক্স নির্মাণে ২০২৩ সালের ৩০ আগস্ট দরপত্র আহ্বান করে গণপূর্ত বিভাগ। পরে ঠিকাদারের দাখিল করা কাগজপত্র সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই না করে ওই বছরের ২ অক্টোবর নিজেদের ইচ্ছায় যৌথ মালিকানাধীন মোস্তফা কনসোর্টিয়ামকে ১০ শতাংশ কম মূল্যে ১৩ কোটি ৩৮ লাখ ৪৯ হাজার ৬১৫ টাকায় ভবনটি নির্মাণের কার্যাদেশ দেন কর্মকর্তারা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মেসার্স মোস্তফা অ্যান্ড সন্সকে সঙ্গে নিয়ে মেসার্স আল-আমিন এন্টারপ্রাইজের মালিক গোলাম মর্তুজা মুন্না এবং মেসার্স সামছুন নাহার কনস্ট্রাকশনের মালিক লুৎফুল লাহিল মাজিদ রাসেল কাজটি ভাগিয়ে নেন। কিন্তু এ দুই প্রতিষ্ঠানের দাখিল করা ১২টি কার্য সম্পাদন সনদের (ওয়ার্ক কমপ্লিশন সার্টিফিকেট) সবগুলোই ভুয়া প্রমাণিত হয়েছে।
এ ঘটনায় নোয়াখালী গণপূর্ত বিভাগের তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী (বর্তমানে বাহ্মণবাড়িয়া জেলায় কর্মরত) সা’দ মোহাম্মদ আন্দালিব ও উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (এসডিই) মো. এমদাদুল হক মিয়ার জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ঠিকাদার বলেন, ‘তথ্য কমপ্লেক্স নির্মাণে কাজের মান খুবই খারাপ। ঢালাইয়ে যে সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে তা অত্যন্ত নিম্নমানের। তদন্ত কমিটি ঢালাই পরীক্ষা করলে তার প্রমাণ পাবে। এ কাজে বহুতল ভবন নির্মাণ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হবে। বর্তমান সময়ে এমন কাজ অত্যন্ত দুঃখজনক।’