বাবা উদ্ধার রাস্তা থেকে, মা হাসপাতালে
রাজশাহীতে নারী চিকিৎসককে অপহরণ
আপলোড সময় :
৩১-১২-২০২৪ ০১:০৪:৩৫ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
রাজশাহীতে নিজ বাসা থেকে একজন নারী চিকিৎসককে অপহরণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অপহরণকারীরা ওই চিকিৎসকের বাবাকেও তুলে নিয়ে যায়। পরে ওই নারী চিকিৎসকের বাবাকে অপহরণকারীরা সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা থানায় এলাকার সড়কে ফেলে চলে যায়। সোমবার ভোরে এ অপহরণের ঘটনা ঘটে।
এদিকে সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) বিকেল পর্যন্ত নারী চিকিৎসকের বাবা সলঙ্গা থানায় পুলিশ হেফাজতে ছিলেন। বাবা-মেয়েকে তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় অপহরণকারীরা ওই চিকিৎসকের মাকে পিটিয়ে জখম করেছেন। তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
অপহৃত এই চিকিৎসকের নাম শাকিরা তাসনিম দোলা (২৬)। তিনি রাজশাহীর ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ থেকে সবেমাত্র ডেন্টাল বিডিএস শেষ করেছেন। তার বাবার নাম আবু তাহের খুরশিদ বকুল। তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ডের অবসরপ্রাপ্ত সেকশন অফিসার। তার বাড়ি রাজশাহী নগরের চন্দ্রিমা আবাসিক এলাকায়। পাঁচতলা বাসার দ্বিতীয় তলায় তারা থাকেন। এটি তাদের নিজের বাসা। চিকিৎসক শাকিরার মা রেহেনা পারভীন ওরফে শিউলি (৫১) গুরুতর আহত অবস্থায় রামেক হাসপাতালের আট নম্বার ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তিনি জানান, ভোরে ফজরের নামাজ পড়ার জন্য তার স্বামী মসজিদে যান। এ সময় তিনি বাইরের ফটকে তালা লাগিয়ে চাবি সঙ্গে নিয়ে যান।
রেহেনা পারভীন জানান, একটু পরই তালা খোলার শব্দ পেয়ে তিনি এগিয়ে যান, এত তাড়াতাড়ি নামাজ না পড়ে ফিরে আসছেন কি না তা দেখতে। তখন বুঝতে পারেন অপহরণকারীরা তার স্বামীকে জিম্মি করে চাবি নিয়ে এসেছে। এ সময় অপহরণকারীরা তাকে ধরে দেয়ালের সঙ্গে মাথা ঠুকে দেয়। মাথায় তালা দিয়ে আঘাত করে। এরপর তারা তাকে বিছানায় ফেলে গলা চেপে ধরেন।
রেহেনা পারভীন জানান, তার কক্ষে দুজন অপহরণকারী ঢুকেছিল। তারা যখন তাকে ছেড়ে দেয় তখন তিনি দৌড় দিয়ে নিচে নেমে রাস্তার ওপর পড়ে যান। ততক্ষণ এই অপহরণকারীরা তার মেয়ে ও স্বামীকে নিয়ে চলে যায়। তার স্বামীকে সলঙ্গা থানায় নিয়ে যাওয়ার পর তাদের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানিয়েছেন, একটি মাইক্রোবাসে করে তাদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। চালকসহ অপহরণকারীরা ছয়জন ছিলেন। তাকে তোলার পরেই মুখ বেঁধে ইনজেকশন পুশ করা হয়। তার চেতনা ফিরে এলে তাকে মহাসড়কের পাশে ফেলে দেওয়া হয়। অপহরণকারীরা চলে যাওয়ার পর খবর পেয়ে রেহিনা পারভীনের আত্মীয়স্বজন এসে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। রেহেনা পারভীন আরও বলেন, বেলা একটার দিকে খবর পেয়েছেন, তার স্বামীকে সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা থানা এলাকায় ফেলে চলে গেছে অপহরণকারীরা। এখান থেকে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত মেয়ের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। এ সময় তিনি বারবার বলছেন, ‘আমার মেয়েটাকে ভিক্ষা চাই।’
সলঙ্গা থানায় যোগাযোগ করা হলে ডিউটি অফিসার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) শফিউল ইসলাম বলেন, দুপুর ১২টার দিকে সলঙ্গা থানার ভেংড়ি এলাকার লোকজন তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। একই মাইক্রোবাসে বাবা ও মেয়েকে অপহরণকারীরা তুলে নিয়ে এসেছিল। তারা মেয়েকে নিয়ে গেছে। রাজশাহী থেকে ভিকটিমের আত্মীয়-স্বজন এসেছে। তাদের কাছে ভিকটিমকে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। এ নিয়ে রাজশাহীতে মামলা হবে।
রাজশাহী নগরের চন্দ্রিমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মতিয়ার রহমান জানান, অপহরণের মূলহোতা হিসেবে তারা তানভীর খান তাজ রওশন আলম নামের একজনের নাম পেয়েছেন। কেউ বলছেন, এই ছেলের সঙ্গে নারী চিকিৎসকের বিয়ে হয়েছিল। কেউ বলছেন, বিয়ে হয়নি। তার নেতৃত্বেই ওই চিকিৎসককে তুলে নেওয়া হয়েছে বলে পরিবার বলছে।’ তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ওই চিকিৎসকের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। এই ঘটনায় পরিবার মামলা করতে চায়। এজাহার দিলে মামলা রেকর্ড করা হবে।’
কমেন্ট বক্স