ঢাকা ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ , ১৫ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

​কমলা চাষে সফল উদ্যোক্তা ইমরান

আপলোড সময় : ১০-১২-২০২৪ ০৮:৩১:১২ অপরাহ্ন
​কমলা চাষে সফল উদ্যোক্তা ইমরান কমলা বাগান পরিচর্যা করছেন ইমরান হোসেন উজ্জ্বল।

জয়পুরহাট সংবাদদাতা :

জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার ভিকনী গ্রামের উদ্যোক্তা ইমরান হোসেন উজ্জ্বল বাণিজ্যিকভাবে কমলা চাষ করে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছেন। বর্তমানে তার বাগানে থোকায় থোকায় ঝুলছে সুস্বাদু কমলা। বাগানটি এখন হলুদে হলুদে ছেয়ে গেছে, যা দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন স্থানীয়রা।

অনেকেই বাগানটি দেখতে এসে কমলা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় বর্তমানে অনেকেই ইমরানের দেখাদেখি কমলা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমন চাষের উদ্যোগে একদিকে যেমন বেকারত্ব কমবে, তেমনি কমবে বিদেশ থেকে আমদানি নির্ভরতা। পাশাপাশি সাধারণ মানুষ বিষমুক্ত কমলা খেতে পারবেন।

ইমরান হোসেন উজ্জ্বল একসময় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ছিলেন। করোনাকালে ব্যবসায় মন্দা দেখা দিলে তিনি একটি নতুন উপায় খোঁজেন জীবিকা নির্বাহের জন্য। এক দিন ইউটিউবে কমলা চাষের ভিডিও দেখে তিনি উদ্বুদ্ধ হন। সিদ্ধান্ত নেন কমলা চাষের দিকে মনোনিবেশ করবেন। তখন তিনি তার বাড়ির পাশের পতিত এক বিঘা জমিতে প্রায় দেড় লাখ টাকা খরচ করে ১০০টি বারী কমলা-২-এর চারা রোপণ করেন। এরপর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। প্রথম মৌসুমেই তার বাগানের খরচ উঠে যায়। বর্তমানে তার বাগান হলুদ রঙের সুস্বাদু কমলায় পরিপূর্ণ।

ইমরান হোসেন উজ্জ্বল বলেন, ‘ব্যবসায় মন্দার কারণে দোকান বন্ধ হওয়ার পর আমি কী করব ভেবে পাচ্ছিলাম না। তখন ইউটিউবের ভিডিও দেখে কমলা চাষের সিদ্ধান্ত নিই। তারপর বাড়ির পাশের জমিতে কমলা চাষ শুরু করি। প্রতিবছর ৩৫-৪০ হাজার টাকা খরচ হয়। বর্তমানে আমার বাগান ভরে গেছে কমলায়। ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। বাজারে কমলা নিয়ে যাওয়ার সময় পাই না। কারণ ক্রেতারা বাগান থেকেই কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এ বছর ১০০ মণ কমলা বিক্রির আশা করছি, যা ৫ লাখ থেকে ৮ লাখ টাকায় বিক্রি হবে। এ ছাড়া আমি চারাও বিক্রি করছি।’

এ ছাড়া আক্কেলপুরের শান্তা এলাকার মুনিরা সুলতানা বলেন, ‘অন্যান্য দেশ থেকে যে কমলা আসে, সেগুলোতে সাধারণত ফরমালিন থাকে। কিন্তু এখানে বিষমুক্ত কমলা পাওয়া যাচ্ছে, তাই আমি এখান থেকে কমলা কিনে নিয়ে যাচ্ছি। বাচ্চাদের জন্যও এই কমলা অনেক স্বাস্থ্যকর।’ 

এদিকে আক্কেলপুর উপজেলা পরিষদের তানহা নামের একজন বাসিন্দা বলেন, ‘কমলা বাগানটি দেখতে এসেছিলাম। বাগানের মধ্যে হলুদ রঙের কমলাগুলো সত্যিই খুব সুন্দর দেখাচ্ছে। আমি কমলা খেয়েছি, এটি অত্যন্ত মিষ্টি। এ জন্য বাসার জন্যও কিনেছি।’ 

স্থানীয় ভিকনী গ্রামের রায়হান আলী বলেন, ‘এই কমলার বাগানটি যেমন সুন্দর, তেমন কমলাগুলোও খেতে অনেক সুস্বাদু। বাজারের কমলার তুলনায় এই কমলা অনেক বেশি মিষ্টি।’ 

একই গ্রামের ছাত্র মোস্তাকিম বিল্লাহ বলেন, ‘আমি পড়াশোনার পাশাপাশি এ রকম একটি কমলা বাগান করার ইচ্ছা। এ জন্য পরামর্শ নিতে আমি এখানে এসেছিলাম।’

স্থানীয়রা জানান, ইমরান হোসেন উজ্জ্বলের সফলতা জয়পুরহাটে নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার চাষের মাধ্যমে শুধু আর্থিক সাফল্যই আসেনি বরং এলাকায় বিষমুক্ত কমলা পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বেকারত্ব দূরীকরণ, আমদানি নির্ভরতা কমানো, ও জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ইমরানের এই উদ্যোগ একটি প্রশংসনীয় পদক্ষেপ হয়ে উঠেছে।

এ বিষয়ে আক্কেলপুর উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি অফিসার কামনাশিস্ সরকার বলেন, ‘লেবুজাতীয় ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের আওতায় আমরা ইমরান হোসেনকে একটি প্রদর্শনী দিয়েছিলাম, যা এখন সফলতার মুখ দেখেছে। মানুষজন এখানে এসে দেখে উৎসাহিত হচ্ছেন। কমলা চাষের জন্য মাটি ও সারের ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যারা এ ধরনের ফসল চাষ করতে চান, তাদের প্রথমে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা উচিত। আমরা ইমরানকে প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য সহযোগিতা করেছি।’


কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ